রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

ভুয়া জন্মসনদ দেখিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা ৫ রোহিঙ্গার

ফরিদপুরের সালথায় অভিভাবকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ দিয়ে পাঁচ রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আবেদনের খবর পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

বুধবার আবেদনগুলো বাতিল করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ।

জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর সালথা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়ীয়া গ্রামের খোরশেদ আলীর মেয়ে দিলদারা বেগম (২৬), মনিরুল ইসলামের ছেলে নূর মোস্তফা (২১), খোকন মিয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান (২৬), কালা মিয়ার মেয়ে বুশরা বেগম (২৫), আব্দুল মানিকের ছেলে নূর বশার (২৩) পাঁচ ব্যক্তি এনআইডির জন্য আবেদন করেন।। আবেদনে তারা কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া জন্মসনদ জমা দেন। একই সঙ্গে তারা গত ১০ সেপ্টেম্বর বল্লভদী ইউনিয়ন থেকে নেওয়া নাগরিক সনদও জমা দেন। এতে স্বাক্ষর করেন বল্লভদী ইউপির চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুজ্জামান শাহীন। আবেদনপত্রে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন ওই ইউপির আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) তাপস কুমার হোড়।

গত মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও করিম টেলিকমের মালিকের সহায়তায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে- এমন খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোড়ন তৈরি হয়। এমন অবস্থায় বুধবার ওই আবেদনগুলো বাতিল করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জন্মসনদ এক জায়গার এবং নাগরিক সনদ আরেক জায়গার। এছাড়াও তারা পরিচয়পত্র নিতে চান সালথার ফুলবাড়িয়া থেকে। এতে সন্দেহ হওয়ায় তাদের আবেদনগুলো বাতিল করা হয়।

তারা রোহিঙ্গা কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সাবলীলভাবে বাংলায় কথা বললেও তাদের কথায় আরষ্টতা ছিল। তবে চেহারায় পার্থক্য খুঁজে পাইনি।

ফুলবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাওন কাজী ও একই গ্রামের ব্যবসায়ী তপন কুমার সরকার জানান, ফুলবাড়িয়া গ্রামে খোরশেদ আলী, মনিরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, কালা মিয়া, আব্দুল মানিক নামে কোনো ব্যক্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই।

আবেদনকারীদের মধ্যে একজন দিলদারা বেগম। তার বাবার নাম খোরশেদ আলী। জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিলদারা বেগমের জন্মসনদ কিশোরগঞ্জের নিকলির ছাতিরচর ইউনিয়ন থেকে করা। তবে সেখানে তার স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ার রাইল্যা গ্রাম। বিষয়টি অস্বীকার করে নিকলির ছাতিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গত ৭ এপ্রিল তার ইউনিয়ন থেকে কোনো জন্মসনদ ইস্যু করা হয়নি।

আবেদনের শনাক্তকারী বল্লভদী ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) তাপস কুমার হোড় বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর আমি কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় করিম টেলিকমের মালিক করিম বাওয়ালী আমার কাছ থেকে ওই পাঁচটি আবেদনের স্বাক্ষর নিয়ে যায়। বুঝতে পারি নাই সে (করিম) আমার সাথে প্রতারণা করবে।

এ ব্যাপারে করিম বাওয়ালীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় বল্লভদী ইউপির চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে ওই পাচজনের নামে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়েছে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

সর্বশেষ